নাছির উদ্দিন রকি •
চট্টগ্রামের বাঁশখালী সমুদ্রসৈকতে গড়ে তোলা ‘বিচ লাইব্রেরি’ ঘিরে আগ্রহ বাড়ছে পাঠকদের। সৈকতের কদম রসুল পয়েন্টে গত ৪ মে ‘বইবন্ধু বিচ লাইব্রেরি’ নামে পাঠাগারটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। সমুদ্রসৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটকদের নজর কেড়েছে এটি। পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয়রা অবসর সময় কাটাতে সাগর পাড়ে বসে বই পড়ছেন।
বিচ লাইব্রেরিতে রয়েছে গল্প, কবিতা, ভ্রমণ কাহিনি ও গোয়েন্দা কাহিনিসহ দুই শতাধিক বই। বই নিয়ে এমন ভিন্নধর্মী আয়োজন করেছে বইপ্রেমীদের সংগঠন ‘বইবন্ধু’। বিচ লাইব্রেরির উদ্বোধন করেন বাঁশখালী উপজেলার খানখানাবাদ ইউনিয়নের সমাজসেবক এনামুল হক চৌধুরী। লাইব্রেরি স্থাপনে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন লেখক সিরাজুল ইসলাম।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, বই পড়ে ভ্রমণের ক্লান্তি কাটাতে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পর্যটকরা বই পড়ে অবসর সময় কাটাতে পারছেন। বিশ্বের সাতটি দেশে বিচ লাইব্রেরি রয়েছে। দুবাই ও থাইল্যান্ডসহ পর্যটননির্ভর দেশের সৈকতের পাশে এমন লাইব্রেরি দেখা যায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বঙ্গোপসাগরের পাশঘেঁষে বাঁশখালী সমুদ্রসৈকতে বিচ লাইব্রেরির অবস্থান। লাইব্রেরি থেকে বই নিয়ে পড়ছেন সব বয়সী মানুষ। তবে সৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকরা এমন আয়োজন দেখে উৎফুল্ল ও মুগ্ধ। একবারের জন্য হলেও লাইব্রেরিতে যাচ্ছেন তারা। আবার যারা বিচে দীর্ঘক্ষণ ঘুরে হাঁপিয়ে উঠেছেন তারা লাইব্রেরি থেকে বই এনে ঝাউগাছের নিচে বসে পড়ছেন। লাইব্রেরিটি সৈকতে এনেছে নতুনত্ব, ভ্রমণে যোগ করেছে নতুন মাত্রা।
বিচ লাইব্রেরি নিয়ে জানতে চাইলে বইবন্ধুর সমন্বয়ক মহিউদ্দিন তোহা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘২০১৮ সাল থেকে বইবন্ধুর পথচলা শুরু। আমরা চেষ্টা করছি, মানুষ যেন বই থেকে দূরে সরে না যায়। বই পড়তে আমরা মানুষকে নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করছি। কারণ বই মানুষের বন্ধু। ইতোমধ্যে ঢাকায় গণপরিবহন, হাসপাতাল ও রেলস্টেশনসহ যেখানে মানুষ অপেক্ষা করে, অবসরে বসে থাকেন, সেখানেই বই রাখার ব্যবস্থা করছি। এই কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় বাঁশখালীর কদম রসুল পয়েন্টে দেশের প্রথম বিচ লাইব্রেরির যাত্রা শুরু হয়। বিশ্বের সাতটি দেশে বিচ লাইব্রেরি আছে। অষ্টম দেশ হিসেবে বাংলাদেশে চালু হলো বিচ লাইব্রেরি। তবে এটি বাংলাদেশে প্রথম। আমরা ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি পাঠকদের।’
মহিউদ্দিন তোহা আরও বলেন, ‘বই পড়ার সঙ্গে পরিবেশের বেশ ভালো যোগসাজশ আছে। সুন্দর ও মনোরম পরিবেশে বইয়ের মাঝে ডুবে থাকার আমেজ আলাদা। বইবন্ধু ইতোমধ্যে ছড়িয়ে গেছে গ্রামগঞ্জে, শহরের অলিতে-গলিতে। প্রাপ্তির খাতায় যোগ হয়েছে অনেক কিছু। শিগগিরই বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে বিচ লাইব্রেরির কার্যক্রম শুরু করবো।’
তিনি বলেন, ‘বই মানুষকে আলোকিত করে। অবসর ও নিঃসঙ্গতায় বিনোদন দেয়। সবসময় বন্ধু হিসেবে পাশে থাকে। এজন্য বইকে সহজলভ্য করার চেষ্টা করছি আমরা। যাতে বই পড়ায় মানুষের আগ্রহ বাড়ে। সবার কাছে বই পৌঁছে দিতে চাইছি। একই সঙ্গে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে বইয়ের দেশ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়াই হচ্ছে বইবন্ধুর লক্ষ্য।’
বিচ লাইব্রেরি স্থাপনে সার্বিক সহযোগিতাকারী লেখক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘তরুণদের ব্যতিক্রমী আইডিয়াগুলো বাস্তবায়নে এগিয়ে না এলে দেশে নতুন কিছু সৃষ্টি হবে না। আমাদের আরও অগ্রসর হতে নতুন নতুন উদ্ভাবন করতে হবে। এসব কার্যক্রমের মধ্য দিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। আমি বইপ্রেমী মানুষ। এমন ব্যতিক্রমী কার্যক্রমের অংশ হতে পেরে ভালো লাগছে। আমি সবসময় তাদের সঙ্গে থাকবো।’
সমাজসেবক এনামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘পর্যটকদের বইয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব করিয়ে দেবে বাঁশখালীর সমুদ্রসৈকতের বিচ লাইব্রেরি। যারা বিচে ক্লান্ত হবেন তারা বইয়ের সঙ্গে সময় কাটাতে পারবেন। এমন আয়োজনের মধ্য দিয়ে সবার মাঝে বইয়ের আলো ছড়িয়ে পড়বে।’
বাঁশখালীর স্কুলশিক্ষক রহিম সৈকত বলেন, ‘প্রতিদিন বাঁশখালীর সৈকতে হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। বিচ লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার পর থেকে বেড়াতে আসা লোকজনের পাশাপাশি স্থানীয় বইপ্রেমীদেরও সমুদ্রের পাড়ে বই পড়তে দেখা যাচ্ছে। বলা যায়, সৈকতে বইয়ের সঙ্গে পর্যটকদের বন্ধন তৈরি হয়েছে।’
সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে আসা চট্টগ্রাম আগ্রাবাদের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘বিচে এসে লাইব্রেরি দেখবো কখনও ভাবিনি। আগে দীর্ঘ সময় সৈকতে ঘোরাঘুরির পর ক্লান্ত হয়ে ফিরে যেতাম। এবার লাইব্রেরিতে এসে বই পড়লাম। আশপাশে অনেক পর্যটককে বই পড়তে দেখলাম। এটি দ্রুত সময়ের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। চমৎকার উদ্যোগ। আয়োজকদের ধন্যবাদ।’
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-